লেখকেরা কে কিভাবে লেখেন
-সুনির্মল বসু
লেখকদের লেখবার ব্যাপারে সকলেরই নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। জার্মানির লেখক পল হেইস গন্ডগোল না হলে লিখতেই পারতেন না, এজন্য তাকে পার্টি দিতে হতো। ইটালির লেখক লুইজি পিরানদেল্লো উঁচু সাঁকোর উপর বসে লিখতেন, ইংরেজ লেখক ডি এইচ লরেন্স ট্রেনের কামরায় বসে লিখতেন। জর্জ বার্নার্ড শ দাঁড়িয়ে লিখতেন, তাড়াতাড়ি লেখায় তার দক্ষতা ছিল। স্যার ওয়াল্টার স্কট রাজার পোশাক পরে লিখতেন। রাশিয়ার লেখক মিখাইল শোলখভ পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। তিনি ছয় মাসের মধ্যে ধীরে বহে ডন, উপন্যাসটি লেখেন। আলজেরিয়ার লেখক আলবেয়ার কামু তিন মাসে উপন্যাস লেখেন।
বাংলা ভাষায় বঙ্কিমচন্দ্র পত্রিকার প্রয়োজনে একাধিক উপন্যাস লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির আলো ছায়ায় লিখতেন। শরৎচন্দ্র মনের প্রেরণা না পেলে, লিখতে চাইতেন না। মানুষের দুঃখ কষ্ট তাকে লিখিয়েছিল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশিরভাগ সময় বনে বসে লিখতে ভালোবাসতেন। লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে লিখেছেন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মাটিতে আসন পেতে জল চৌকিতে কাগজ রেখে লিখতেন। একালের লেখক সমরেশ বসু সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যে ছটা অবধি টানা লিখে যেতেন। লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সারাক্ষণই লেখা নিয়ে থাকতেন। রবীন্দ্রনাথের পর সম্ভবত সবচেয়ে বেশি লিখেছেন তিনি। প্রয়াত অতীন বন্দোপাধ্যায় সকালে লিখতে বেশি ভালোবাসতেন। বিখ্যাত লেখক বিমল মিত্র তেইশ বছর সারারাত জেগে সাহেব বিবি গোলাম উপন্যাস লিখেছিলেন। খেলার মাঠের খবরাখবর নিয়ে সংবাদ করতে করতে লেখক মতি নন্দী স্ট্রাইকার, কোনি উপন্যাস লেখেন।
আসলে, সৃষ্টি প্রক্রিয়া সকলের এক রকম নয়। বিভিন্ন লেখকের রচনা অভ্যাস ভিন্ন রকমের। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চোখের সামনে দেখা ঘটনাগুলির উপর অসামান্য কবিতা লিখেছেন। কলকাতার যীশু, উলঙ্গ রাজা তার অসামান্য সৃষ্টি। বিখ্যাত লেখক রমাপদ চৌধুরী বহু অসামান্য উপন্যাস লিখেছেন। বীজ, হৃদয়, যে যেখানে দাঁড়িয়ে, লাল বাঈ প্রভৃতি। শেষ দিকে বছরে একটা উপন্যাস লিখতেন। এইসব লেখার গভীরতা তুলনা হয় না। নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় একটি মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে প্রথম গল্প লেখেন, বর আসিতেছে। লেখক নরেন্দ্রনাথ মিত্র প্রথম গল্প লেখেন, রস। লেখক সন্তোষ কুমার ঘোষ গল্প লেখেন, দুই কাননের পাখি।
এভাবেই কবি ও লেখকদের মেজাজ মর্জিতে ভরে উঠেছে সাহিত্যের বিশাল অঙ্গন। প্রতিটি লেখকের চিন্তা ও রচনার পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকরণ। কিন্তু তাতে সমৃদ্ধ হয়েছে, সাহিত্যের বিশাল অঙ্গন।